
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: বাঁচার জন্য খাওয়া নাকি খাওয়ার জন্য বাঁচা – এ ভাবনার কোনও মিমাংসা নেই। তবে যার জন্যই যা হোক না কেন, রসনা তৃপ্তিতে তৎপর হই আমরা সবাই। আলুসেদ্ধ ভাত পরম তৃপ্তি দিলেও, মাঝে মাঝে আমাদের স্বাদকোরকগুলি একটু বদল চায়। আর সেই বদল অবশ্যই সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে রেখেই আমরা করতে চাই। কেউ কেউ আবার সারা পৃথিবীর কড়াই খুন্তির লড়াইকেই চেখে দেখতে চান। সেই কথা মাথায় রেখেই যুগশঙ্খ ডিজিটালে বিশ্ব কুইজিন। আজ প্রবাসী।
একটাই পৃথিবী, একটাই ভাষা – এমন হলে বেশ হত। এত সীমারেখা থাকত না, এতো বিধি-নিষেধ থাকত না। আমরা যদি একটু ইতিহাসের পাতা ওল্টাই তাহলে দেখব এতো বিভেদের মাঝেও আমরা কিন্তু এক হয়েই আছি। আমরা জানি বাঙালির ডাল-ভাত বড়ই প্রিয়, কিন্তু জানেন কি এই ডাল -ভাত খাওয়ার চল ভারতে এসেছে নেপাল থেকে। মধ্য প্রাচ্যে দশম শতাব্দীতে খাওয়া হত শিঙাড়া। এই মধ্য প্রাচ্যেরই আরেকটি খাবার ভারতে অতি প্রচলিত। আরবীরা বলে জালাবিয়া, পারস্য বলে জিলাবিয়া, আর ভারত বলে জিলিপি। আমরা যাঁরা গরম গুলাব জামুন খেতে ভালোবাসি, তাঁরা আসলে পারস্য দেশের মিষ্টিকেই আপন করে নিয়েছি। পাঞ্জাবী খানার মধ্যে খুব সুস্বাদু রাজমা চাওয়াল। মেক্সিকোতে এই রাজমার চাষ হত, পর্তুগীজদের হাত ধরে রাজমা এসেছে ভারতে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন রসনায় আমরা একেবারে জড়িয়ে আছি। আর তাই আজকের বিশ্ব কুইজিনে প্রবাসী।
নামটা শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে নিশ্চয়ই পেরেছেন যে এই বিভাগে কী থাকতে চলেছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বিদেশি খাবারের গল্পই থাকবে এখানে। আলতামিরার গুহা থেকে রিয়েল মাদ্রিদ অথবা ঐতিহাসিক দুর্গ থেকে পুরনো সব ক্যাথিড্রাল – এইসবের কথা যখন ওঠে তখন একটাই দেশের কথা মনে হয়। স্পেন। ইউরোপ মহাদেশের অন্যতম দেশ এই স্পেন। চোখ বন্ধ করে যদি দেশটার কথা চিন্তা করেন তাহলে ভেসে উঠবে উত্তর-পূর্বে ফ্রান্স, উত্তর পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে পর্তুগাল, দক্ষিণে জিব্রাল্টার আর দক্ষিণ-পূর্বে ভূমধ্যসাগর। এইরকম একটি দেশের দু’টি পদ আজ আপনার জন্য।
স্প্যানিশ অমলেট
সাধারণ বাঙালি মানুষের একটা ধারণা আছে আমরা যা খাই, বিদেশের মানুষ তা খায় না। এমন মনে হওয়ার কারণ ঠিক কী তা জানা নেই। আমরা যেমন ডিম খাই, স্প্যানিশ মানুষরাও ডিম খায়, আলু খায়, পেঁয়াজ খায়। তাহলে আলাদা কোথায়? মূলত মশলা এবং তেলের ব্যবহারে স্বাদ পালটে যায়। স্প্যানিশ রান্নায় সাধারণত অলিভ অয়েল আর পার্সলে পাতা ব্যবহৃত হয়। স্প্যানিশ অমলেট করতে পেয়াজ, আলু, পার্সলে পাতা, ডিম, নুন এবং অলিভ অয়েল লাগবে। প্রথমে ভাল করে আলু ধুয়ে কেটে নিন। আলু যত পাতলা করে কাটবেন খেতে তত ভালো হবে। পেঁয়াজও ভাল করে কুচিয়ে নেবেন। এবার প্যানে বেশ কিছুটা অলিভ অয়েল দিয়ে আলু এবং পেঁয়াজ ভেজে নিন। শ্যালো ফ্রাই করলে ভাল হয়। ভাজা হলে তেল থেকে তুলে নামিয়ে রাখুন। এবার অন্য একটি পাত্রে ডিম ভেঙে রাখুন। যদি দু’জনের জন্য বানান তাহলে ৪টে ডিম নিলে ভালো হয়। এবার ওই ডিমের মধ্যে ভেজে রাখা আলু-পেঁয়াজ ও পার্সলে পাতা ভালো করে মিশিয়ে হালকা ফেটিয়ে নিন। এই সময় স্বাদ মতো নুন দিন। প্যানে অল্প তেল (অবশ্যই অলিভ অয়েল) দিয়ে ফেটিয়ে রাখা ডিম দিয়ে দিন। অল্প আঁচে হতে দিন। ভাল করে ভাজা হলে উলটে দিন এবং ওইদিকটাও ভাল করে ভেজে নিন। যখন পুরো রান্নাটা হয়ে যাবে তখন দেখতে একদম কেকে্র মতো লাগবে। তাই নামিয়ে কেকেজ মতো কেটে কেটে গরম গরম খান স্প্যানিশ অমলেট।
স্প্যানিশ গার্লিক প্রন
স্পেন দেশটা যখন সমুদ্রে ঘেরা তখন সেখানে চিংড়ি পাওয়া যাবে এটা স্বাভাবিক। স্প্যানিশ ভাষায় এই পদটার নাম ‘গমবস অল আজি’। এটা তৈরি করতে লাগছে চিংড়ি, রসুন, পার্সলে পাতা, সাদা ওয়াইন, লাল লংকারগুড়ো, নুন। ফ্রেশ চিংড়ির থেকে যদি ফ্রোজেন চিংড়ি দিয়ে এই রান্নাটা করেন তাহলে ভাল হয়। তবে যে চিংড়িই নিন না কেন তাকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া চিংড়িতে অল্প নুন এবং লাল লংকারগুড়ো মাখিয়ে রাখুন। এরপর পাতলা করে রসুন কেটে নিন। পার্সলে পাতা কুচিয়ে রাখুন। একটা প্যান গরম করে রসুন দিন, ১০ সেকেন্ড বাদে অলিভ অয়েল দিন এবং রসুন বাদামি না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। রসুন বাদামি হলে চিংড়িগুলো দিন। রসুন এবং চিংড়ি কিছুক্ষণ ভাজুন তারপর অল্প (৪ টেবিল চামচ) সাদা ওয়াইন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন। ফুটে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার আপনার মনে হতে পারে আপনি ওয়াইন খান না, সেক্ষেত্রে কি দেবেন? আমি বলব রান্নার উপকরণ পালটে গেলে পদ তার অরিজিনালিটি হারায়। তাই প্রবাসী বিভাগে আমি কোনও ফিউশনের কথা বলছি না। স্প্যানিশ লোকজন এই গার্লিক চিংড়িটা খায় টোস্টেড পাউরুটি দিয়ে। তাই আপনিও চিংড়ি রান্না শেষে টোস্টারে মুচমুচে করে পাউরুটি টোস্ট করে রবিরারের ডিনারটা জমিয়ে করুন।