বিশ্ব কুইজিন

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: বাঁচার জন্য খাওয়া নাকি খাওয়ার জন্য বাঁচা –এ ভাবনার কোনও মীমাংসা নেই। তবে যার জন্যই যা হোক না কেন, রসনা তৃপ্তিতে তৎপর হই আমরা সবাই। আলুসেদ্ধ ভাত পরম তৃপ্তি দিলেও, মাঝে মাঝে আমাদের স্বাদকোরকগুলি একটু বদল চায়। আর সেই বদল অবশ্যই সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে রেখেই আমরা করতে চাই। কেউ কেউ আবার সারা পৃথিবীর কড়াই খুন্তির লড়াইকেই চেখে দেখতে চান। সেই কথা মাথায় রেখেই যুগশঙ্খ ডিজিটালে বিশ্ব কুইজিন। আজ প্রবাসী।
প্রবাসীর রসনাতৃপ্তিতে আজ চলুন যাই নেপালে। আকাশ ঘেরা পাহাড়, চারিদিক সতেজ সবুজ, চড়াই-উৎড়াই পাহাড়ি পথ, খরস্রোতা পাহাড়ি নদী, উপত্যকার জীবন-যাপন – এই নিয়েই প্রতিবেশী নেপাল। এখানে গেলে আপনি ভাত-ডাল-তরকারি পাবেন। এই চিরপরিচিত খাবারগুলো বেশ জনপ্রিয়। তবে এই চেনা পদের বাইরে বেশকিছু পদ আছে যা খেতেও বেশ সুস্বাদু। আজ তারই খোঁজ করব। নেপালি রান্নার স্বাদে ভারত ছাড়া চিন ও তিব্বতের প্রভাব পাওয়া যায়। তবে নেপালি রান্নায় তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র ও ভৌগোলিক অবস্থানের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। আজ যে দু’টি পদ নিয়ে বলব সেটি নেপালের স্থানীয় জনজাতির উৎসব স্পেশাল খাবার। শুভকাজে আগে মিষ্টি মুখ পরে অন্যকিছু।
ইয়োমারি
নেপালিদের স্থানীয় একটি জাতি নেওয়ার, তাদের মধ্যে এই পদটি খাওয়া হয়। নভেম্বর – ডিসেম্বর মাসে পূর্ণিমার সময় জ্যোৎস্নায় রাতভর নেওয়ারিদের ‘ইয়োমারি পুন্নি উৎসব’ হয়। নেওয়ারি পরিবারের ছেলে-মেয়ে সবাই এই উৎসবের প্রস্তুতি নেয়। এই সময় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ইয়োমারি তৈরি ও খাওয়া হয়। এই উৎসবে মূলত তারা চাঁদের বন্দনা করে।
সম্পর্কটা যখন চাঁদের সঙ্গে তখন ধরে নেওয়া যায় পদটা দেখতে সাদা হবে। হ্যাঁ। ৫-৬ চামচ গুড়োদুধ, ১-২ চামচ চিনি, ১ চামচ ঘি একটি পাত্রে নিয়ে এক কাপ দুধ অল্প করে ওই মিশ্রণে দিয়ে মিশিয়ে নিন। মেশানো হলে মাইক্রোওভেনে ১মিনিটের জন্য রাখুন। এক মিনিট পর নামিয়ে দেখুন মিশ্রণের ঘনত্ব ঠিক আছে কিনা। যদি মনে হয় দুধ লাগবে তাহলে অল্প একটু দুধ মিশিয়ে আবার ১মিনিটের জন্য মাইক্রোওয়েভে রাখুন। বার করে হাফ চামচ এলাচের গুড়ো, নারকেল কোড়া, কাজুবাদাম ও আলমন্ড কুচি মিশিয়ে ঢেকে রাখুন। তৈরি আপনার ইয়োমারির পুর।
এবার অন্যপাত্রে দু-আড়াই কাপ চালের গুড়ো, হাফ কাপ ময়দা, এক চামচ ঘি দিয়ে মিশিয়ে নিন। এবার অল্প অল্প করে গরম জল দিয়ে চালের গুড়ো ও ময়দা মেখে নিন। ভালো করে মাখা হলে পর একটি পাতলা কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। মিনিট ১৫-২০ পর ওই মাখা থেকে লেচি কেটে মাছের শেপ দিন এবং তাতে ওই পুর ভরে দিন। এবার প্রশ্ন কিভাবে দেওয়া যাবে মাছের শেপ? হাতে অল্প ঘি নিয়ে লেচি গোল করে ইন্ডেস্ক ফিংগার দিয়ে ওই লেচির মধ্যে একটা ভ্যাকুওয়ম তৈরি করে পুরটা ভরতে হবে। সবগুলো ইয়োমারি তৈরি করে ভাপে বানিয়ে ফেলুন মিষ্টি ইয়োমারি। শীতকালে নানারকমের মিষ্টি তো আমরা বানাই , এবার শীতে না হয় ইয়োমারি বানিয়ে দেখুন। চিনির বদলে ঝোলাগুড় দিতে পারেন। আবার গুড়ো দুধের বদলে ক্ষোয়াক্ষীরও ব্যবহার করতে পারেন। ও হ্যাঁ, ফিগার কনসাস হলে মিষ্টি ইয়োমারির বদলে নোনতা ইয়োমারিও বানাতে পারেন।
ছইলা
ছইলা নামের এই খাবারটিও নেওয়ারিদের জনবসতিতে প্রচলিত। সাধারণত এই পদটি মোষের মাংস দিয়ে তৈরি হয়। তবে পাঠা ও হাঁসের মাংস দিয়েও এই পদ রান্না করা যায়। চূড়া নামের এক ধরনের চালের তৈরি খাবারের সঙ্গে নেপালিরা এটি খায়। নেপালিদের বিভিন্ন উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ পদ এটি। এবার বলি নেপালিদের এই পদ আপনি যদি বাড়িতে রান্না করেন তাহলে বলব পাঠার মাংস দিয়েই করুন। পাঠার বনলেস জায়গা এই রান্নার জন্য বেছে নিন। ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে শিক কাবাব বানানোর মতো তেল-মশলা ছাড়া মাংসগুলোকে শিকে গেঁথে নিয়ে পুড়িয়ে নিন। সঙ্গে দুটো মাঝারি আকৃতির টমেটোও ঝলসে নিন।
আগুন থেকে তুলে শিক থেকে মাংস বার করে একটু ঠান্ডা করে টুকরো করে কেটে নিন। একটি বড়পাত্রে পোড়ামাংসের টুকরোগুলো রেখে একে একে আদাবাটা, রসুনবাটা, লাল লংকারগুড়ো, নুন, রসুনপাতা কুচি, ঝলসানো টমেটো দিন। একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে মেথি ও হলুদগুড়ো ফোঁড়ন দিয়ে ওই পাত্রে ঢেলে দিন। এবার ভালো করে সমস্ত মশলা ওই মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। মাখতে হাত ব্যবহারে লজ্জা পাবেন না। তৈরি আপনার থুড়ি নেপালি ছইলা। আপনি কী সহযোগে খাবেন সেটা একেবারে আপনার পছন্দ, তবে আমাকে বললে আমি বলব রুমালি রুটি কিংবা নান দিয়ে জাস্ট জমে যাবে।