ইজরায়েলি শিশু মুশেরের প্রাণ বাঁচানো অসমের জাকিরের জীবন রান্নাঘরেই আটকে!

যুগশঙ্খ প্রতিবেদন, বদরপুর (আসাম) : ২৬/১১ মুম্বই হামলার এক যুগ পূর্ণ হল এবার। বিভীষিকা তাড়া করছে কাজি জাকির হুসেনকে। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা মায়ানগরে হামলা চালায়। সব মিলিয়ে প্রায় ১৭৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ছোট্ট ইহুদি শিশু মুশে হুলজবার্গকে সেদিন আজমল কাসভদের সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন অসমের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরের ( Badarpur ) ভাঙ্গা ( Bhanga ) এলাকার বাসিন্দা কাজি জাকির হুসেন ( Qazi Zakir Hussain )। মুম্বাইয়ের নরিম্যান হাউস ( Nariman House ) অর্থাৎ বর্তমানের শাবাদ হাউসের ( Chabad House ) রাঁধুনি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তিনিই একমাত্র মুসলিম হিসেবে ওখানে কাজ করতেন। জাকির এবং শাবাদ হাউসের পরিচারিকা সান্দ্রা স্যামুয়েল মিলে আতঙ্কবাদীদের নিশানার আড়াল করেছিলেন মুশেকে।প্রতিবছরই শাবাদ হাউসে ছাব্বিশে নভেম্বরের দুঃসহ ঘটনা স্মৃতিচারণ হয়ে থাকে। এতে ইজরাইল ( Israel ) থেকেও মুশের পরিবারের লোকজন সহ অনেকেই আসেন। ঘটনার বিবরণ পুনরাবৃত্তি করার জন্য ডাক পড়ে জাকিরের। কয়েকবার তিনি সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃতও হয়েছেন।
২০১৮ সালে বারো বছর বয়সী মুশে ( Moshe Holtzberg ) মুম্বই সফর করে গেছে। তার বাবা গ্যাব্রিয়েল এবং মা রেবেকা হুজলবার্গের মৃত্যুস্থান পরিদর্শন করে সে। তখনও কাজি জাকির শাবাদ হাউসে গিয়েছিলেন। সেটাই মুশের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা। মুশে বর্তমানে ইজরায়েলে ইহুদি ধর্মীয় শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করছে। সান্দ্রাও নাগরিকত্ব নিয়ে চলে গেছেন ইজরায়েলে। ২০২০ সালে শাবাদ হাউস বড়ই শান্ত। কোভিড-১৯ ( COVID-19) আতঙ্ক সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। এর ফলে ওখানে নেই কোনও অনুষ্ঠান। ডাক পড়েনি জাকিরেরও। তবে লোমহর্ষক কিছু স্মৃতি এখনও নরিম্যান হাউসে টেনে নিয়ে যায় জাকিরকে। তাজ গ্রুপেরই একটি বিলাসী হোটেলে বর্তমানে শেফের কাজ করেন জাকির। বৃহস্পতিবার দ্বাদশ বর্ষপূর্তিতে গাড়ি নিয়ে একা একা চক্কর কেটে আসেন শাবাদ হাউসে। বাইরে দাঁড়িয়ে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এলেন গ্যাব্রিয়েল-রেবেকা সহ সেদিনের নিহতদের।
মুম্বাই থেকে টেলিফোনে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে দৈনিক যুগশঙ্খের সাংবাদিক তাজ উদ্দিনকে ( Md Taz Uddin) জাকির জানান, সেদিন রাত নয়টার পরেই নরিম্যান হাউসে হামলা চালায় আতঙ্কবাদীরা। অনেকেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন। যাদের মধ্যে মুশের মা-বাবাও ছিলেন। ক্রন্দনরত মুশে তখন সান্দ্রার নাম ধরে চিৎকার করছিল। সান্দ্রা এবং জাকির মিলে মুশেকে লুকিয়ে রাখেন। আতঙ্কের মধ্যে একটি ফ্রিজের আড়ালে নীরব অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে নিজেদের এবং একই সঙ্গে মুশেরের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হন। পরে গোলাগুলি থামলে সান্দ্রার হাতে তুলে দেন মুশেকে।
সেইসময় জাকিরের কোলে দু বছরের মুশের ছবি সব আন্তর্জাতিক স্তরের প্রচারমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি ছয়মাস পরে ভাঙ্গায় ( Bhanga ) নিজের বাড়িতে এলে অভিনন্দন জানাতে মানুষের ঢল নামে। যুগশঙ্খের পক্ষে সেলিম আহমদ ( Md Salim Ahmed ) পুরো ঘটনাক্রমের ওপর জাকিরের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পাঠকরা অনেক তথ্য জানতে পেরেছিলেন।সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে যায়। কিন্তু বদলে না জাকিরদের জীবন। ২০১৮ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইজরায়েল সফরে গেলে মুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয় সান্দ্রা স্যামুয়েলের (Sandra Samuel)। কিন্তু প্রচারের অলক্ষে থেকে যান সত্যিকারের হিরো কাজি জাকির। তাঁর কাজের স্থান পরিবর্তন হয়। কিন্তু সেই রান্নাবান্না আর বাসন মাজাতেই আটকে থাকে জীবন!